Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৩rd ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রেস রিলিজ: ভারতের নাগপুরে অবতরন করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর ডাইভারটেড ফ্লাইট বিজি ৩৪৭/১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ (ঢাকা-দুবাই) এর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্যোশাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত প্রোপাগান্ডার বিষয়ে প্রতিবাদ প্রেরণ এবং প্রকৃত ঘটনা সর্বসাধারণকে জানানো প্রসঙ্গে।


প্রকাশন তারিখ : 2025-02-23

 

বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-দুবাই রুটের নির্ধারিত ফ্লাইট বিজি৩৪৭ ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা বেজে ৪০ মিনিটে ৩৯৬ জন যাত্রী এবং ২২ টন কার্গো নিয়ে যাত্রা শুরু করে, উক্ত বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটিতে ০২ জন বৈমানিক, ১০ জন কেবিন ক্রু এবং ৩৯৬ জন যাত্রী ছিল।

 

যাত্রা পথে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের নাগপুর শহর অতিক্রান্ত হওয়ার সময় ক্যাপ্টেন পিছনের কার্গো কোম্পার্টমেন্ট থেকে ককপিটে ফায়ার সতর্কীকরণ সংকেত পান। এসময় যাত্রীদের নৈশভোজ পরিবেশন করা হচ্ছিল। উক্ত ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড ICAO/BOEING/CAAB নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করেন এবং উড়োজাহাজ পরিচালনার দিক নির্দেশানুযায়ী নিকটবর্তী ভারতের নাগপুরের “ডঃ বাবা সাহেব আমবেদকা” বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সময় রাত ১১ বেজে ২৭ মিনিটে নিরাপদে অবতরণ করেন। বৈমানিক নাগপুরের বিমান অবতরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরই সকল যাত্রীকে “যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাগপুরে অবতরনের” সিদ্ধান্তটি ইন-ফ্লাইট এনাউন্সের মাধ্যমে অবহিত করেন। ফ্লাইটটি নাগপুরে অবতরণের পর সকল যাত্রীগণকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে নেয়া হয়। ৩৯৬ জন যাত্রী এবং ১২ ক্রুসহ সর্বমোট ৪০৮ জনকে বিমানবন্দরে  যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি বাসে করে উড়োজাহাজটি থেকে আনুমানিক অর্ধ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ১ঘন্টা ২০ মিনিটের বেশী সময় উক্ত ৪০৮ জনকে বিমানবন্দর টার্মিনালে  নিয়ে যাবার অনুমতি প্রদান করেননি। এসময় পানি এবং টয়লেট সুবিধার জন্য যাত্রীরা বার বার অনুরোধ করা সত্যেও ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা অনুমতির আনুষ্ঠানিকতার প্রসঙ্গ তুলে তা প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। এতে করে বিশেষভাবে বৃদ্ধ এবং নারী যাত্রীগণ সবচাইতে বেশী দূর্ভোগে পতিত হন। পরবর্তীতে রাত ০১:০০টায় টার্মিনালে যাত্রীদের লাউঞ্জে নেবার অনুমতি দেন।

 

ইতিমধ্যে ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল এর মাধ্যমে যাত্রীদের সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং সেইসাথে আশ্বস্ত করা হয় যে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের সুবিধার্থে সকল বিষয়ের যাবতীয় খরচাদি বহন করবে। নাগপুর কর্তৃপক্ষ অবহিত করেন, এই বিপুল সংখ্যক খাবার প্রস্তুতের জন্য তাঁদের ৩-৪ ঘন্টা সময় প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বোয়িং ৭৭৭ এর মত এত বৃহদাকার যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উক্ত বিমানবন্দরে নিয়মিত চলাচল করে না। বিমানের যাত্রীদের হোটেলে পাঠানের জন্য অনুরোধ করা হলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের  অস্থায়ী ল্যান্ডিং পারমিট প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করে। একারণে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের টার্মিনালেই থাকতে হয়।

যাত্রীদের দেখাশোনা করার জন্য বিমানের দিল্লিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজারকে বলা হলে তিনি সেখানে ইনডিগো এয়ার-এ করে ০৯:১৫টায় নাগপুরে পৌঁছান। অনুমানিক ভোর ০৩:০০টার দিকে যাত্রীদেরকে পানি সরবরাহ করা হয়। সকাল ০৭:০০ টার দিকে পানি ও চা দেওয়া হয় এবং সকাল ১০:৩০টায় নাস্তা পরিবেশন করা হয়। নাগপুর ক্যাটারিং-এর সীমিত সক্ষমতা থাকার কারণে নাস্তা দিতে সময় বেশি লেগেছে।

 

বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম উড়োজাহাজের সকল কার্গো ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহৃত হওয়ায় উক্ত উড়োজাহাজ দ্বারা যাত্রীদের দুবাইতে পরিবহন সম্ভব নয়-এই মর্মে মতামত প্রদান করেন।

 

সেই মোতাবেক বিমান ঢাকা অপারেশন্স কন্ট্রোল উদ্ধারকারী ফ্লাইটের পরিকল্পনা হাতে নেয় যা ঢাকা থেকে বিজি১২৬ (দোহা-চট্টগ্রাম-ঢাকা) সকাল ৭:৪৫ ঘটিকায় নামার পর সকাল ৯:৩০ এ যাত্রার সময় পরিকল্পনা করা হয়।

 

ভারতের প্রয়োজনীয় অনুমতিপ্রাপ্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টা বেজে ২৮ মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা বেজে ৪৯ মিনিটে নাগপুরে অবতরণ করে।

 

নাগপুর বিমানবন্দর রানওয়ে রক্ষনাবেক্ষন কাজের জন্য দুপুর ০১ টা ৩০ মিনিট থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অবগত হয়ে নাগপুরে অবতরনের পরপরই উক্ত যাত্রীদের উদ্ধারের ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেন অপেক্ষমান যাত্রীদের বিমানে আসন গ্রহন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীদের ব্যাগেজবহনকারী কন্টেনার সমূহ উদ্ধারকারী ফ্লাইটে লোড করার নির্দেশনা দেন। যাত্রীগণ উড়োজাহাজে আসন গ্রহণ করলেও নাগপুর একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর হওয়ায় বৃহদকার উড়োজাহাজের ব্যাগেজ কন্টেনার লোড করার জন্য শুধুমাত্র একটি যন্ত্র এবং অপর্যাপ্ত কন্টেনার ট্রলীর কারনে কল্পনাতীত সময়ক্ষেপনের পর কন্টেনার লোডিং সমাপ্ত হয়। এরই মধ্যে রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় CAAB কর্তৃক অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিকাল ৫টা ৪২ মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি নাগপুর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং নিরাপদে দুবাইতে অবতরণ করে। নাগপুর বিমানবন্দরে অপেক্ষাকালীন সময়ে যাত্রীদের দুপুরের খাবার উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে পরিবেশন করা হয়। উড্ডয়নের পর যাত্রীদের জন্য রাতের খাবারও পরিবেশিত হয়।

 

যাত্রীদের দুর্ভোগের সম্ভাব্য কারণ:

১। ভারতের নাগপুর একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের ধারণ ক্ষমতা সীমিত।

২। ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরাপত্তা অনুমতির দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে যাত্রীদের টার্মিনালে না নিয়ে বহু সময় বাসে অবস্থানের কারণে পানি এবং টয়লেটের ব্যবস্থা থেকে যাত্রীরা বঞ্চিত হন।

 

৩। ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিমানের উক্ত যাত্রীদের অস্থায়ী অবতরনের অনুমতি প্রদানে অস্বীকৃতি। ফলে বাধ্য হয়েই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীদেরকে হোটেলে না পাঠিয়ে টার্মিনালে অপেক্ষমান রাখতে বাধ্য হয়। 

৪। ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ৩৯৬ জন যাত্রীর খাদ্য প্রস্তুতে অন্যান্য বিমানবন্দর সমূহের তুলনায় বেশী সময় গ্রহণ করে।

৫। ভারতের নাগপুর বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট এর স্বল্পতার জন্য যাত্রীদের ব্যাগেজবাহী কন্টেনার লোডিং এ দীর্ঘ সময়ক্ষেপন করে। ফলত: বিমানবন্দর বন্ধের পূর্বে উড্ডয়ন সম্ভব হয়নি।

৬। টার্মিনালের অভ্যন্তরে যাত্রী লাউঞ্জে বিমানের দিল্লির স্টেশন ম্যানেজার প্রবেশের পাশ ইস্যুতে নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপন করায় যাত্রীবৃন্দের সাথে সর্বোক্ষণ যোগাযোগ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।

ভারতের স্থানীয় বিধিনিষেধ এবং নাগপুর বিমানবন্দরের সীমাবদ্ধতার কারনে উপরোল্লিখিত উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে ছিল।

স্যোশাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত প্রোপাগান্ডার বিষয়ে প্রতিবাদ প্রসঙ্গে:

এয়ারক্রাফটের ভিতরে ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ থাকার পরেও নাগপুরের উক্ত উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বর্তমান সরকার এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে বিব্রত করার জন্য একজন নারী এবং একজন পুরুষ যাত্রী উক্ত ফ্লাইটের ভিতরে যাত্রী সাধারণের প্রতি উস্কানী মুলক বক্তব্য প্রদান করে এবং ভিডিও ধারণ করে স্যোশাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচার করে। উক্ত যাত্রীদ্বয় ফ্লাইটে ক্রমাগত উস্কানীমুলক বক্তব্য প্রদান করলেও অন্যান্য সম্মানিত যাত্রীরা তাদের কথায় কর্নপাত করেনি এবং ধৈর্য্য নিয়ে ফ্লাইটে অবস্থান করে কর্মরত ক্রুদের সহযোগিতা করে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্মানিত যাত্রীদের ধৈর্য্য ধারণ এবং ফ্লাইটে ক্রুদের সহায়তা করার জন্য তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করছে এবং সাথে সাথে উল্লেখিত প্রোপাগান্ডার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

 

সর্বোপরি নিয়ন্ত্রণ বর্হিভূত পরিস্থিতির কারণে সম্মানিত যাত্রীদের সাথে সংঘঠিত হওয়া অসুবিধাসমূহের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে দু:খ প্রকাশ করছে।